মানুষের মতো পাখিদেরও বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে। মানুষ ও পশুপাখির স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিচ্যুতিকে রোগ বলা হয়। শরীরের অস্বাভাবিক লক্ষণকে রোগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। রোগ ব্যবস্থাপনা বলতে এর প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় ও প্রতিকারকে বোঝায়। প্রাথমিকভাবে বাহ্যিক লক্ষণ দেখে অসুস্থ মুরগি শনাক্ত করা যায়। নিচে একটি অসুস্থ মুরগির লক্ষণ দেওয়া হলো-
১। অসুস্থ মুরগি দল থেকে আলাদা হয়ে যায়।
২। মাটিতে বসে ঝিমাতে থাকে।
৩। খাদ্য ও পানি গ্রহণ কমে যায় বা ত্যাগ করে।
৪। মুরগির গায়ের পালকগুলো উসকো খুশকো দেখায়।
৫। পায়খানা স্বাভাবিক হয় না।

বিভিন্ন কারণে পাখির রোগ হয়ে থাকে। রোগের প্রধান কারণ জীবাণু। মুরগির ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ খুবই মারাত্মক। ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসা নেই। তাই রোগ দেখা দিলে মুরগিকে আর বাঁচানো যায় না। তাছাড়া পরজীবীজনিত রোগ মুরগির অনেক ক্ষতি করে থাকে। মুরগির ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে। টিকা দেওয়ার পর ঐ রোগের বিরুদ্ধে মুরগির শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে। তাই বাড়ির বা খামারের সকল সুস্থ মুরগিকে একসাথে টিকা দিতে হয়। নিচে মুরগির কতগুলো রোগের নাম দেওয়া হলো-
১। ভাইরাসজনিত রোগ: রাণীক্ষেত, গামবোরো, বার্ড ফ্লু ইত্যাদি
২। ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ : ফাউয়েল কলেরা, ফাউয়েল টাইফয়েড, পুলোরাম, যক্ষ্মা, বটুলিজম ইত্যাদি

৩। পরজীবীজনিত রোগ: মুরগির দেহের ভিতরে ও বাইরে দুই ধরনের পরজীবী দেখা যায়। দেহের বাইরে পালকের নিচে উঁকুন, আটালি ও মাইট হয়ে থাকে। দেহের ভিতরে গোল কৃমি ও ফিতা কৃমি দ্বারা মুরগি বেশি আক্রান্ত হয়। এরা মুরগির গৃহীত পুষ্টিকর খাদ্যে ভাগ বসায়। অনেক কৃমি মুরগির শরীর থেকে রক্ত চুষে নেয়। তাছাড়া প্রায়ই মুরগির রক্ত আমাশয় হতে দেখা যায়। এ রোগটি প্রোটোজোয়া দ্বারা হয়ে থাকে। গৃহপালিত পশু দীর্ঘদিন খামারে থাকে। তাই রোগ হলে এদের চিকিৎসা দ্বারা সুস্থ করে পুনরায় উৎপাদনে নিয়ে আসা যায়। কিন্তু বাণিজ্যিক মুরগির খামারে এটা সম্ভব হয় না। তাই মুরগির খামারে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে।
পদক্ষেপসমূহ-
১। মুরগির ঘর ও এর চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা
২। মুরগির খামারে বন্য পশুপাখিকে ঢুকতে না দেওয়া
৩। মুরগিকে সময়মতো টিকা দেওয়া
৪। মুরগিকে তাজা খাদ্য খেতে দেওয়া
৫। মুরগিকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা
৬। মুরগিকে সুষম খাদ্য সরবরাহ করা
৭। মুরগির বিছানা শুষ্ক রাখার ব্যবস্থা করা
৮। মুরগির বিষ্ঠা খামার থেকে দূরে সংরক্ষণ করা
| কাজ: শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে মুরগির সাধারণত কী কী ধরনের রোগ হয় তার একটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে। |
মুরগির খামারে রোগ দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে একজন পশুচিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে অতি দ্রুত নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত-
১। অসুস্থ পাখিকে আলাদা করে পর্যবেক্ষণ করা
২। প্রয়োজন হলে পাখির মলমূত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা করা
৩। মারাত্মক ভাইরাস রোগ হলে সকল মুরগিকে ধ্বংস করা
8। মৃত মুরগিকে মাটির নিচে চাপা দেওয়া
৫। রোগাক্রান্ত মুরগি বাজারে বিক্রি না করা
৬। পশু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মুরগিকে চিকিৎসা দেওয়া

নতুন শব্দ: ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী, প্রতিরোধ, প্রোটোজোয়া
Read more